মেডিভয়েস রিপোর্ট: আত্মহননের একটি কারণের বিপরীতে বেঁচে থাকার অনেকগুলো কারণ থাকে বলে মনে করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা।
আজ মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) ঢামেকে বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক পরিষদ ও মহিলা পরিষদের আয়োজনে ‘অদিতি সরকারের চলে যাওয়া ও নারীর বিপণ্ণতা সচেতনাতমূলক আলোচনা সভা’ শীর্ষক আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক টিটো মিঞা বলেন, ডা. অদিতি সরকারের বেঁচে থাকার জন্য চোখের সামনে বাবা-মা ছিল, সন্তানরা ছিল; তাদের কথা চিন্তা করে সে এ পথ থেকে সরে আসতে পারতো। একজন চিকিৎসকের কাছে মানুষের হক আছে। একইভাবে মানুষের প্রতি, দেশের প্রতি চিকিৎসকদেরও দায়িত্ব আছে। একজন মানুষের বেঁচে থাকার অনেক কারণ রয়েছে। এজন্য অনেক কারণের দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকতে হবে।
অদিতির স্মৃতিচারণ করে ঢামেক অধ্যক্ষ বলেন, ‘সে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে আমার চেম্বারে দুইদিন এসেছিল। তখন জানতে পেরেছিলাম, সে পরীক্ষা, সংসার ও চাকরি—এসব নিয়ে সংগ্রাম করছিল। ফলে নিজের প্রতি খেয়াল করার মতো অবস্থা ছিল না। তাঁর পা ফুলে গেছে, শরীরে জ্বর, চলাফেরা করতে পারছে না। এ অবস্থায় তাকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিই। প্রায় দুই মাস পর সে রিপোর্ট নিয়ে আসে। বুঝতে পারলাম, লেখা-পড়া ও পারিবারিক চাপের কারণে নিজের শরীরের দিকে মোটেই খেয়াল করতে পারেছে না।
তিনি বলেন, সব জায়গায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে কাজ করার জন্য চেষ্টা করেছিল অদিতি। সে সব জায়গায় ভালো পারফর্ম করতে চেয়েছে, কিন্তু নিজের প্রতি ভালোভাবে যত্ন নেয়নি। সে যেটির অধীর আগ্রহে থাকতো, তা হলো স্বামীর ভালোবাসা। সে এ ভালোবাসা পায়নি।
স্বামীদেরকে পরামর্শ দিয়ে ডা. টিটো মিঞা বলেন, ‘স্ত্রী ও সংসারের প্রতি ভালোবাসা কোনো বিনিয়োগ না। আবার পরিবারকে অনেক সময় দিতে হবে, বিষয়টি এ রকমও না। তবে কোয়ালিটি সময় দিতে হবে। চিকিৎসকদের সময় নেই, এটি যেমন সত্য, তেমনি যতটুকু সময় আছে ততটুকু স্ত্রী ও পরিবারকে দেওয়া হলে কোনো অভিযোগ থাকে না। পরিবারের সবাই সবাইকে সম্মান করতে হবে। এর বাইরে ভালো বন্ধু দরকার আছে। যে কেউ ভালো বন্ধু হতে পারে, তবে বন্ধুকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে হবে।’
‘আমরা যতটুকু সময় পাই, তা পরিবার ও প্রিয়জনের জন্য ব্যয় করবো। তাহলে অনেক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে। আত্মহনন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আত্মহত্যা অবশ্যই প্রতিরোধ করা যায়। অদিতির মৃত্যুর জন্য আইনি তদন্ত হবে, রহস্য উদঘাটন হবে। তবে আজকের আয়োজন হলো সামাজিক তদন্ত। এর থেকে শিক্ষা নিতে হবে। প্রত্যেকের উচিত নিজের প্রতি খেয়াল রাখা’, যোগ করেন ডা. ঢামেক অধ্যক্ষ।