সাহেদুজ্জামান সাকিব: শামসুর রহমান সোহাগ (২৭)। পেশায় একজন নিরাপত্তাকর্মী। গত বছরের শুরুর দিকে তার ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। প্রথমে স্বাভাবিক জ্বর অনুভূত হলে চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামল সেবন করেন। কিন্ত এতে জ্বর কমার পরিবর্তে আরও বেড়ে যায়। পরবর্তীতে চিকিৎসকের পরামর্শে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার ব্লাড ক্যান্সার শনাক্ত হয়।
হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে পড়েন নানা ভোগান্তিতে। অনেক চেষ্টা করেও রাজধানীর মহাখালীতে ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে একটি শয্যার ব্যবস্থা করতে পারনেননি। অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আসেন। ১০ দিন অপেক্ষার পর সেখানেও ভর্তি হতে পারেননি। নিরুপায় হয়ে বড় ভাইয়ের পরামর্শে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। শুরু হয় চিকিৎসা। এ সময় হাসপাতালের খরচ জোগাড় করতে খুবই কষ্টের মধ্যে পড়তে হয় তাকে।
সোহাগের বর্তমান আবাসস্থল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায়। নিজের অফিসের কর্মকর্তা, আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত অনেকের সহযোগিতায় চিকিৎসা চলে তাঁর। দীর্ঘ চার মাস চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেন তিনি। তার চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টাকা।
সরকারি হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসায় সীমাবদ্ধতা ও অপ্রতুলতার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ মেডিভয়েসকে বলেন, ‘দেশে হাতেগুনা কয়েকটা হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগীর তুলনায় হাসপতালের সংখ্যা অনেক কম। প্রত্যেক জেলায় ন্যূনতম একটা হলেও ক্যান্সার ইউনিট থাকা উচিত। একটি জেলার সকল ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা জেলায় করা গেলে সংকট অনেকটাই কেটে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ক্যান্সারের চিকিৎসায় সবার আগে প্রয়োজন একটি জাতীয় কর্মকৌশল। কীভাবে ক্যান্সার শনাক্ত করা হবে, কীভাবে প্রতিরোধ করা হবে, ক্যান্সারের চিকিৎসা কীভাবে হবে—সার্বিক বিষয়ে একটি জাতীয় কর্মকৌশল তৈরি করতে হবে। আমরা ম্যালেরিয়া ও কালাজ্বরের ক্ষেত্রে এটা করতে পেরেছি এবং সফলও হয়েছি।
ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে দরিদ্র মানেুষেরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে নিয়তির কাছে হার মেনে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। তারা দুই ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়ছেন। প্রথমত অবধারিতভাবে জীবন হারাচ্ছেন, দ্বিতীয়ত আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের শেষ সম্বলটুকুও হারিয়ে ফেলছেন।’
এমন পরিস্থিতিতে সবার আগে ক্যান্সার প্রতিরোধে মনোযোগ দিতে হবে জানিয়ে এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বাংলাদেশে কোন ধরনের ক্যান্সার বেশি হয়, সেগুলো নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে কারণটাও খুঁজে বের করতে হবে। যেমন- ধূমপান ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার একটা বড় কারণ। এ ছাড়া তামাক জাতীয় পণ্য ব্যবহারে ঠোঁট ও মুখের ক্যান্সার হয়। এসব পণ্যের বিষয়েও একটা নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন।’
বিভিন্ন ভাইরাসজনিত ক্যান্সারের জন্য টিকাদানের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘মহিলাদের সার্বিক্যাল ক্যান্সার হয়, বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা আক্রমণের ফলে। এই ভাইরাসের বিপরীতে যদি আমরা টিকা দিতে পারি, তাহলে ক্যান্সারের একটা অংশ প্রতিরোধ করা যাবে। এ রকম আরও কয়েক ধরনের ক্যান্সার আছে, যেগুলো ভাইরাসজনিত কারণে হয়ে থাকে। আমাদের কর্মকৌশলের মধ্যে এসব বিষয় থাকা উচিত।’
এমইউ