মেডিভয়েস রিপোর্ট: জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত প্রায় ১৩ হাজার ৮৪৮ জনের নাম তালিকাভুক্ত করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সহায়তা, চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের জন্য আহতদের তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। আহতদের সারা জীবনের জন্য চিকিৎসা সুবিধা ও সাহায্যের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম আহতদের সুযোগ–সুবিধা প্রদান নিয়ে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তিন দিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন এক কর্ম অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আহতদের ক্যাটাগরি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত ক্যাটাগরির ভিত্তিতে তালিকা প্রণয়ন করে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্তরা ‘অতি গুরুতর আহত’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। নূন্যতম এক চোখ, হাত অথবা পা ক্ষতিগ্রস্ত ও স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের অনুপযোগী, সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন, সম্পূর্ণভাবে মানসিক বিকারগ্রস্ত এবং কাজ করতে অক্ষম বা অনুরূপ আহত ব্যক্তিদের এ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এদেরকে আজীবন সাহায্যের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ক্যাটেগরি ‘বি’তে ‘গুরুতর আহত’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন আংশিক দৃষ্টিহীন ও মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত বা অনুরূপ আহত ব্যক্তিরা, তাদেররকে দীর্ঘদিন সাহায্য দিতে হবে।
আর ‘সি’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন সেসব আহতরা, যারা ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন ও স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সক্ষম অথবা এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তবে চিকিৎসা শেষে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সক্ষম হবেন।
উপদেষ্টা ফারুক ই আজম জানিয়েছেন, প্রথম ক্যাটাগরিতে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের এককালীন পাঁচ লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে এক অঙ্গহানি হয়েছে এমন অবস্থায় যারা আছেন, তাদের এককালীন তিন লাখ টাকা এবং মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে। আর তৃতীয় ক্যাটাগরিতে সামান্য আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়ে গেছেন, তারা অগ্রাধিকারভিত্তিতে চাকরি ও পুনর্বাসনে অগ্রাধিকার পাবেন। তবে তারা ভাতা পাবেন না।
তিনি বলেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে প্রতিটি শহীদ পরিবারকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র করে দেওয়া হবে। বাকি ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাইয়ের মধ্যে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এই ৩০ লাখ টাকা শুধু শহীদ পরিবারের জন্য।
উপদেষ্টা আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তারা ‘জুলাই শহীদ’ নামে খ্যাত হবেন। এই নিরিখে তারা সনদ পাবেন, পরিচয়পত্র পাবেন। জুলাই অভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন, তারা জুলাই যোদ্ধা নামে অভিহিত হবেন। তারা এই নিরিখে পরিচয়পত্র পাবেন, সরকারি সুবিধা পাবেন। তারা আজীবন এই সুবিধা পাবেন। ভাতাও পাবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক ই আজম বলেন, জুলাই অধিদপ্তরের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। এ সপ্তাহের মধ্যে বা শিগগিরই অধিদপ্তর আত্মপ্রকাশ করবে। একটা নীতিমালা হয়েছে। এটা চূড়ান্ত পর্যায়ে।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সরকারিভাবে অধিদপ্তর করছে। আগামী নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তারা জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা নিয়েই আসবেন। আশা করছি, তারা এই ধারা অব্যাহত রাখবেন।
এসআই/এনএআর/