মেডিভয়েস রিপোর্ট: চট্টগ্রামে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে একইসাথে ছয় নবজাতকের জন্ম হয়েছে। একইসাথে জন্ম নেওয়া ছয়টি শিশু মধ্যে—পাঁচজন কন্যা ও একজন পুত্র। জানা গেছে, ছয় নবজাতকের মা- মরিয়ম বেগম এবং ছয়টি শিশু—সকলেই সুস্থ রয়েছেন।
শনিবার (১০ মে) দুপুরে নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল ন্যাশনাল হসপিটাল চট্টগ্রাম লিমিটেডে তাদের জন্ম হয়। হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. নাজনিন সুলতানা লুলুর (এফসিপিএস, গাইনি ও অবস্টেট্রিক্স) তত্ত্বাবধানে এই জটিল ডেলিভারি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
চট্টগ্রামের কক্সবাজার জেলার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের এই সাহসিনী মা চিকিৎসকদের সহায়তায় ছয় সন্তানের জন্ম দেন, যা সাধারণত সিজারিয়ান ডেলিভারির মাধ্যমেই হয়ে থাকে। তবে চিকিৎসকদের পূর্বপ্রস্তুতি, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কারণে স্বাভাবিকভাবে এই ডেলিভারি সম্পন্ন হয়।
ন্যাশনাল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কারিশমা সুলতানা এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত ৫ বছরে প্রতিমাসেই ন্যাশনাল হাসপাতালে আমার দেখা একসঙ্গে দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত নবজাতক জন্মের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে একসঙ্গে ছয় নবজাতকের জন্মের ঘটনা এবারই প্রথম। ১৯ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় থেকে ওই মা লুলু ম্যাডামের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। তারপর থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। আমরা সম্ভাব্য জটিলতা আঁচ করতে পেরেছিলাম, তবে শেষমেশ স্বাভাবিকভাবে সফলভাবে ডেলিভারি করাতে পেরে গর্বিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (ছয় নবজাতকের মা) এ নিয়ে চারবার সন্তান জন্ম দিয়েছেন। দ্বিতীয়বারের সময় একসঙ্গে চার সন্তানের ভ্রুণ গর্ভে ছিল। কিন্তু সেসময় ওই বাচ্চাগুলো পাঁচ মাসের মাথায় নষ্ট হয়ে যায়। ওই সময় তিনি শারীরিক জটিলতায় ভুগে অনেক কষ্ট করেছেন বলেও আমাদের জানিয়েছেন। কয়েকবছর পর আবার আরেকটা বাচ্চা হয়। এইবার আবার গর্ভধারণ করলে আল্ট্রাতে পাঁচ সন্তানের অস্বিত্ব পাওয়া যায়। পরক্ষণে তারা ম্যাডামের তত্ত্বাবধানে আসে। রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা জানতাম ৫ জন বেবি হবে কিন্তু ডেলিভারির সময় দেখলাম ছয় জন বাচ্চা। সাধারণত নরমাল ডেলিভারিতে ৪০ সপ্তাহের মতো সময় লাগে। যদি টুইন বেবি হয় তাও কমপক্ষে ৩৪ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়। কিন্তু এই বাচ্চাগুলো একটু অপরিপূর্ণ। ৩০ সপ্তাহের মধ্যেই হয়ে গেছে।’
একইসাথে এতো শিশু জন্ম নেওয়াটা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এমন প্রশ্নের জবাবে এ চিকিৎসক বলেন, ‘অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় ডেলিভারির সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ জন্য আমরা সব রকমের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। আমরা মাথায় রেখেছি— কোনোভাবেই মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে দেওয়া যাবে না। ডোনার থেকে শুরু করে ডেলিভারির আগে-পরে সব ধরনের মেডিসিন সব পর্যাপ্ত রাখা ছিল। যাতে জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’
জানা গেছে, ছয় নবজাতকের জননী মরিয়ম বেগম ও বাবা নুর মোহাম্মদ কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁর এলাকার বাসিন্দা। উপজেলা জুড়ে এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এমআই/