মেডিভয়েস রিপোর্ট: চাকরি স্থায়ীকরণ এবং রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির হুশিয়ারি দিয়েছেন কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপারডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আউটসোর্সিং কর্মীরা।
আজ সোমবার (১৬ জুন) সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে তৃতীয় দিনের মতো কর্মসূচি শুরু করেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ১০০৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আন্দোলনকারীরা জানান, করোনা মহামারীর ভয়াল সময়ে দেশজুড়ে স্বাস্থ্যসেবায় নিযুক্ত ছিলেন ইআরপিপি প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত এক হাজার চারজনের বিশাল জনবল। চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকারী এসব কর্মী বর্তমানে পাচঁ মাস ধরে বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, ‘মহামারি মোকাবিলায় সামনে ফ্রন্টলাইনে থাকলেও এখন উপেক্ষিত হতে হচ্ছে।’
ইআরপিপি স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেন, ‘দেশের জন্য জীবনবাজি রেখে কাজ করেও তারা এখন উপেক্ষিত। এ সময় তারা বকেয়া বেতন পরিশোধ, চুক্তি নবায়ন এবং রাজস্বখাতে নিয়োগ চূড়ান্ত করার দাবিতে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান।’
জানা গেছে, ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া/ক্রিটিক্যাল কেয়ার) ১৬ জন, মেডিকেল অফিসার (আইসিইউ) ৮০, ল্যাব কনসালট্যান্ট ৩০, সিনিয়র স্টাফ নার্স ১৫০, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ১২৬, ডাটা অপারেটর ১৯০, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট ৫১, ওয়ার্ড বয় ১০৪, আয়া ১০৩ ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী ১৫১ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে ২৫৯ জন রাজধানীতে, ১৫৩ জন পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে, এবং ৫৯২ জন জেলা শহরে কোভিড ও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় কর্মরত ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ধাপে ধাপে ইআরপিপি প্রকল্পে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে তাদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করা হয়। যদিও প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত, তবে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তির মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়।
পরবর্তীতে ৭ জানুয়ারি ২০২৫ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত স্টিয়ারিং কমিটির ১৩তম সভায় ইআরপিপি প্রকল্পের মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে জুন ২০২৫ পর্যন্ত বর্ধিত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর ভিত্তিতে কর্মীদের মৌখিকভাবে দায়িত্বে বহাল থাকতে বলা হয়। তারা জানায়, জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত নিয়মিত কাজ করলেও কোনো বেতন পাননি।
তারা অভিযোগ করেন, গত ২৫ মে হঠাৎ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও গবেষণা শাখা একটি চিঠি দিয়ে তাদের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। এতে তারা হতবাক হন। একইসঙ্গে, তারা আশঙ্কা করছেন—একটি প্রভাবশালী মহল ইচ্ছাকৃতভাবে এই দক্ষ জনবলকে বাদ দিয়ে নতুন অদক্ষ লোক নিয়োগ দিতে চাইছে, যার মাধ্যমে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা চলছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট জনবল জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিল। কিন্তু ইআরপিপির কর্মীরা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তারা নির্ধারিত সময়ে কাজ করেছেন এবং হাজিরাশিট যথাযথভাবে পাঠানো হয়েছে। এই মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদও জানিয়েছেন তারা।
এমআই/এনএআর/