মাঝে মধ্যে মনে হয় স্কিন স্পেশালিষ্ট হওয়াই ভাল ছিল। এতে কোন ঝামেলা নেই, ইমার্জেন্সি নেই, নেই কোন হৈ চৈ। খুব বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষা নেই এবং কমিশনের অপবাদ নেই। রোগী আসবে, দেখবো, দেখেই রোগ নির্ণয় করবো। এরপর ওষুধ দিবো, কেউ ভালো হবে, কেউ হবেনা। কেউবা সাময়িক ভালো হবে, আবার ফিরে আসবে। বারবার ফিরে আসবে। এই বারবার ফিরে আসা রোগীর সংখ্যা স্কিনে অনেক বেশি। যদিও এই স্কিন আর সেই স্কিন নেই। এখন অনেক শাখা প্রশাখা, অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি ও অনেক বেশি সুস্থতা।
অধ্যাপক রাশেদ স্যারের শ্বশুর মশাইয়ের কথা মনে পড়ছে। ‘বাবা তোমাকে তো যৌতুক দিতে পারলাম না, পাঁচটা রোগী দিয়ে গেলাম।’ এর অর্থ এই পাঁচটা রোগী দিয়েই এক জীবন পার করা যাবে। কারণ ওরা বারবার ফিরে আসবে।
চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞরা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। গোপন সমস্যার ওষুধ দিলেন, রোগী খেলো। একদিন, দুইদিন, ম্যালাদিন...। কাজ হলো না, এখন কি করবেন? হাসপাতাল ভাঙচুর করবেন? ডাক্তারকে মারবেন? সাংবাদিক সম্মেলন করবেন? বলবেন, ভুয়া ডাক্তার কি ওষুধ দিয়েছে, কাজ তো হচ্ছেনা? এটি সম্ভব নয়, মান সম্মানের ব্যাপার। গোপন কথা মানুষ জেনে যাবে। ফলে রোগীকে সয়ে যেতে হবে এবং সয়ে যায়ও।
আবারও গোপনে গিয়ে বলবে, স্যার, ওষুধ তো খাচ্ছি! কাজ হচ্ছেনা, এখন কি করব? স্কিন স্পেশালিষ্ট, আহা কি শান্তি! এই জনমে পাওয়া হল না এই শান্তি।
মাঝে মধ্যে ভাবি সাইকিয়াট্রিস্ট হলেই ভালো ছিল। মানুষজন মনের রোগ নিয়ে আসবে, কেউ সুস্থ হবে, কেউ হবেনা। সুস্থ না হলে চিল্লাচিল্লি করবেনা। ভাঙচুর করবেনা। এমনকি জটিলতা হলেও চুপচাপ চেপে যাবে। কাজ না হলে তো আর চিল্লায়া বলা যাবেনা, কি ওষুধ দিয়েছেন, আমার পাগলামি তো ভালো হচ্ছেনা। এসব নিয়ে কি আর চিল্লানো যায়, মানুষ যে পাগল বলবে! তাই চুপচাপ চেপে যাওয়া ভাল। সাইকিয়াট্রিস্ট, আহা মনের সার্জন।
আফসোস, হলাম দেহের সার্জন, ভাসকুলার সার্জন। সার্জনতো, ভয় লাগে এবং আতঙ্কে থাকি। সবাইকে কি আর সুস্থ করা যায়, সবাইকে কি আর খুশী করা যায়? অপারেশনে ব্যর্থতা থাকে, সফলতা থাকে, জটিলতা থাকে, থাকে মৃত্যুর হাতছানি।
আমি এবং আমরা সবাই সফলতার পূজারী, সবাই আমরা সফলতা চাই, ব্যর্থতা মানতে রাজি নই। সমস্যাটা এখানেই। একজন চিকিৎসক কখনোই শতভাগ সফল হন না। প্রত্যেক সুস্থ রোগীর কাছে তার চিকিৎসক একজন হিরো। আমরা হিরো হই প্রতিদিন, প্রতিমাস, বছরের পর বছর। জিরো হই কদাচিৎ, কালেভদ্রে। বাজারে ছড়ানো গল্পগুলো বেশির ভাগ এই কালেভদ্রটা নিয়েই পড়ে থাকে।
সর্বদা তাই এক প্রার্থনাতেই ডুবে থাকি। আমাকে দিয়ে কারো উপকার না হোক, অপকার যেন না হয়।
এএইচ/