মেডিভয়েস রিপোর্ট: ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে অন্তত ১০ বার ফাঁস হয়েছে মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। এর মাধ্যমে সারাদেশে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছে প্রশ্নফাঁসাকারী একটি চক্র। বিনিময় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। ফাঁস হওয়া প্রশ্নে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকায় নাম লিখিয়েছে এমন কয়েকশ’ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের অনেকেই এখন চিকিৎসক হয়ে চিকিৎসাসেবাও দিচ্ছেন!
সিআইডির সাইবার পুলিশ মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকারী বিশাল এক সিন্ডিকেটের খোঁজ পায়। এ ঘটনায় সিআইডি বাদী হয়ে ২০২০ সালের করা একটি মামলার তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এ ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এখন পর্যন্ত মোট ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আর অভিযুক্ত প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের বাকি সদস্যদের ধরতে সিআইডি’র অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আজ সোমবার (৯ অক্টোবর) সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান মেডিভয়েসকে বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস চক্রের সাথে জড়িত এমন ৩৬ জনকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস সঙ্গে যারা জড়িত তারা কেউ রেহাই পাবে না। যেসব শিক্ষার্থীরা ফাঁস হওয়া প্রশ্নে আজ চিকিৎসক, তাদের অভিভাবক ও মূলচক্রসহ কেউ ছাড় পাবে না। অভিযান চলছে বাকিদের গ্রেপ্তার করতে।’
প্রশ্ন ফাঁস মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমার বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, “মামলার তদন্ত চলছে। তাই মামলা সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ”
সাম্প্রতিক সময় এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া জানান, দেশের সব স্তরের প্রশ্নফাঁস বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে সিআইডির বিশেষায়িত একাধিক দল সারা বছর মাঠে কাজ করে। ইতোমধ্যে এসএসসি, এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এবং বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকারী বড় চক্রগুলোকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনেছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে নিয়মিত প্রশ্ন ফাঁসকারী বিশাল এক সিন্ডিকেটের খোঁজ পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ। এ ঘটনায় ২০২০ সালের ২০ জুলাই মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায় প্রশ্নফাঁস চক্রের অন্তত ৮০ সক্রিয় সদস্য প্রায় ১৬ বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রায় সবাই বিভিন্ন মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার, নয়তো প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে প্রশ্নফাঁস করতেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে কয়েকজন দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম উঠে এসেছে, যারা প্রশ্ন পেয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। ইতোমেধ্যে অনেকে পাশ করে ডাক্তারও হয়ে গেছেন। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।
এ বিষয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী মেডিভয়েসকে বলেন, ‘যারা প্রশ্নফাঁস করে ডাক্তার হয়েছে, এরা কত বড় অপরাধ করেছে, তা নিজেরাই বুঝতে পারছে না। প্রশ্নফাঁস একটা ফৌজদারি অপরাধ। তাদেরকে এই অপরাধে যারা সহযোগীতা করেছেন, তাদের অভিভাবক ও প্রশ্ন সরবারাহ যারা করেছেন তারাও দায়ী।’
তিনি বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই প্রশ্নফাঁসকারী কোনো চিকিৎসক চিকিৎসা ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ আইনানুগ হবে না। এখন আমরা অপেক্ষা করছি, সিআইডি বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিভাবে তারা এটা উদঘটন করে। এরপর বিজ্ঞ আদালতের রায় পরিষ্কার হলে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) ও বিএমএ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’