শহরের বুকে যেদিন জলপাই রঙা ট্যাঙ্ক এলো ,
আমার শিরদাঁড়া বেয়ে বয়ে গেল শীতল একটা স্রোত
আর তোমার ঘৃণার পারদ তখন তুঙ্গে
ওই লোহার টুপি কিংবা হাতের ভারী অস্ত্র নেভাতে পারেনি তোমার চোখের আগুন ।
আমি স্মৃতি হাতড়ে দেখলাম,
সেদিন রাজপথে যখন মিছিলের ঢল নামলো
তোমার স্লোগানে গলা মিলিয়ে ঝড় তুললো হাজার খানেক তুমি।
আমার সাহস হয়নি
সেদিন পাখির মত গুলি করে মানুষ মারলো ওরা।
আমি অবাক চেয়ে দেখি,
এক সারি রাইফেলের আগে তুমি দুহাত মেলে দাঁড়িয়ে,
বুকে বিদ্রোহের উথাল পাথাল ঝড়,
চোখে তখনও বিশ্বাস
ওরা নিশ্চয় দেশের মানুষ মারতে পারে না;
পারে কি?
পারে!
ওরা পেরেছিল!
একে একে চারটি বুলেট বিদ্ধ করেছিল তোমার ভালোবাসা ভরা বুক
আমি বিস্ময়ে কথা বলতে ভুলে গেলাম।
তুমি ফিনিক্স পাখি হয়ে আগুন জ্বালিয়ে গেলে;
রাগে, ঘৃণায়, স্পর্ধায়, তীব্র দেশপ্রেমে একেক জন হয়ে উঠল আশ্চর্য আগ্নেয়গিরি
তারা আর বুলেট ভয় পায় না
তারা আর অন্যায়কে ছাড় দেয় না
পরোয়া করে না নিজের জীবনকে
শুধু পরোয়া করলাম আমি।
তুমি আবার নামলে দাবি আদায়ে,
ওরা গুলি চালালো
তুমি বিদ্রোহীদের পানি বিতরণ করে সঙ্গ দিলে,
ওরা গুলি চালালো
তুমি বন্ধুর লাশ নিয়ে ফিরতে চাইলে,
ওরা গুলি চালালো তোমার ওপর,
গুলি চালালো তোমার লাশের উপরেও।
আমি ঘরের কোনে মুঠোফোন হাতে নিয়ে
চেয়ে চেয়ে দেখলাম,
শুধু বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রইলাম আমি।
বুকের মাঝে তীব্র হাহাকার,
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ
তবুও ভয় ভেঙে পাশে দাঁড়ালাম না একটি বার।
মৃত্যু ভয়ে হিম হয়ে ঘরেই পড়ে রইলাম।
দেশে একদিন স্বাধীনতা এলো
আমিও বেরিয়ে এলাম ভয়ের খোলস ছেড়ে।
শহরের দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতিতে ভরে গেছে তোমাদের গৌরবের সুঘ্রাণ;
তোমরা আজ পুরো দেশের হয়েছো
হয়েছো পুরো জাতির,
আর আমি হয়েছি শুধু নিজের।
তোমাদের এনে দেওয়া স্বাধীনতায় বুক ভরে শ্বাস নিই লজ্জায়!
কবিতার লেখক: নিশাত তাসনীম স্বস্তি
শিক্ষার্থী, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।