মেডিভয়েস রিপোর্ট: খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুলনা) হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ। গতকাল সোমবার (১৪ অক্টোবর) হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগে ওই হামলার ঘটনা ঘটে। পরে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বিষয়টি মেডিভয়েসকে নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন খুলনা নগরীর হাফিজনগর খোড়া বস্তি এলাকার মো. জয়নাল গাজী (৪৫) ও তার স্ত্রী মনিরা বেগম (৪০)। জয়নাল গাজী একই এলাকার মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে।
ওসি শফিকুল ইসলাম মেডিভয়েসকে বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় এজাহারভুক্ত দুই আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ সকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।
খুমেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, সোমবার সকালে মাসুদ-আয়েশা দম্পতির চার বছরের শিশু কন্যা মাইশাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডে বদলি করা হয়। বিকেলের দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) দেওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়। এ সময় নিহত শিশুর নানা-নানী কর্তব্যরত চিকিৎসক ও আয়াদের শারীরিকভাবে হেনস্তা ও শ্লীলতাহানি করেন।
পরে পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডের ওয়ার্ড মাস্টার আতাউর রহমান বাদী হয়ে সোনাডাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৪ অক্টোবর দুপুর আনুমানিক একটার সময় হাফিজনগর খোড়া বস্তি এলাকার শিশু মাইশা (৪) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়। পরবর্তীতে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পেডিয়াট্রিক্স ওয়ার্ডে (শিশু বিভাগে) রেফার্ড করেন। ওয়ার্ডে ভর্তির পরে তাকে বিধি মোতাবেক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। সেখানে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কর্তব্যরত চিকিৎসক কর্তৃক তাকে ফলোআপ করা হয়। এক পর্যায়ে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিপিআর দেওয়াকালীন সময় ৫টা ৪০ মিনিটের সময় রোগী মারা যায়।
এতে আরও বলা হয়, শিশুর মৃত্যুর পর জয়নাল গাজী ও মনিরা বেগমসহ অজ্ঞাতনামা ২-৩ জন আসামী কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সকে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে কর্তব্যরত দুই নারী চিকিৎসক নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সেবিকাদের চেঞ্জিং রুমে আশ্রয় নিলে আসামীরা মিলে লাথি মেরে ওই রুমের দরজা খুলে দুই চিকিৎসক এবং ওয়ার্ডের আয়াকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন। এ সময় একজন চিকিৎসকের গায়ে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করেন ওই আসামী।
এজাহারে বলা হয়েছে, এ সময় তাদেরকে নিবৃত করার চেষ্টা করলে কর্তব্যরত ওয়ার্ড বয়দেরকেও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি ও লাথি মেরে জখম করেন তারা। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করেন। সর্বশেষ রোগীর ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই রোগীকে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তারা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র (ভর্তি ফাইল) সাথে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে কথা বলতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক আখতারুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এনএআর/