মেডিভয়েস রিপোর্ট: ডেল্টা হেলথকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সাদী বিন শামসসহ পাঁচজনকে মিথ্যা মামলায় হয়রানিসহ নানা কারণে চিকিৎসকরা অনিরাপত্তায় ভুগছেন। এ অবস্থায় অনতিবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ ইউনাইটেড মেডিকেল অর্গানাইজেশনস অব বাংলাদেশের (ইউমব) চিফ কো-অর্ডিনেটর ডা. মোবারক হোসাইন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনের শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন সভাকক্ষে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে এ দাবি জানান তিনি। শহীদ রিকশাচালক ইসমাইল হত্যা মামলা থেকে ডা. সাদী ও অপর চারজনের নাম প্রত্যাহার এবং চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবিতে এই কনফারেন্স আয়োজন করা হয়।
এ সময় ডা. মোবারক হোসাইন বলেন, জুলাই গণঅভ্যুাথানের মধ্য দিয়ে সচেতন প্রত্যেকটি নাগরিক চেয়েছেন যেন ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়, যা সত্য তা যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। মানুষ যে নির্যাতিত হয়েছে, সে নির্যাতন থেকে যেন মুক্তি পায়। এটি প্রতিটি সচেতন নাগরিকেই আকাঙ্ক্ষা ছিল। সেজন্য মানুষ তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছে, আন্দোলনকারীদের জীবন রক্ষার জন্য চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট করে যদি বলতে চাই, চিকিৎিসকদের কাছে কোনো ধর্ম নেই, কোনো বর্ণ নেই, কোনো জাত নেই, গ্রোত্র নেই, কোনো শ্রেণীভেদ নেই। আমরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দল, মত—সবকিছুর উর্ধে উঠে চিন্তা করি, আমার কাছে যিনি অসুস্থ হয়ে এসেছেন, তিনি একজন মানুষ। আমার কাছে এটিই সবচেয়ে বড় পরিচয়।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত সকল পক্ষকে চিকিৎসকরা সেবা দিয়েছেন বলেও জানান ডা. মোবারক হোসাইন। বলেন, ‘আমার মনে হয়, আজকে যে ভাইটিকে (ডা.সাদী) নিয়ে এখানে বসেছি এবং তাঁর সাথে ডেল্টা হেলথকেয়ার হাসপাতালের যারা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছিলেন, তারাও হয়ত আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসুস্থদের সেবা দিয়েছেন। পুলিশের ভাইয়েরা যখন আহত হয়ে এসেছেন, তাদেরকেও সেবা দিয়েছেন যারা ছাত্রলীগের কর্মী ছিলো, তাদেরকে সেবা দিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যারা অসুস্থ হয়ে এসেছেন তাদেরকেও সেবা দিয়েছেন। রামপুরা একটি হটস্পট ছিলো আন্দোলনের জন্য। ফলে চিকিৎসকরা সবাইকে সেবা দিয়েছেন।’
শহীদ ইসমাইল হত্যা মামলায় ডা. সাদী বিন শামসসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা প্রহসনমূলক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৭ সেপ্টেমবর যখন এই মামলা করা হয়, তখন এজহারে তাঁদের কারো নাম ছিল না। হঠাৎ করে কী হলো, আপনারা তদন্ত করতে গিয়ে ১৭ জানুয়ারি মামলার এজহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার না করে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেলেন। এতো তড়িঘড়ি করে নিয়ে গেলেন যেন মূল আসামী প্রমাণসহ পেয়ে গেছেন।
ডা. মোবারক বলেন, ‘ইসমাইল হত্যায় জড়িতদের যেন শাস্তি সুনিশ্চিত করা হয়। একই সাথে হয়রানির শিকার পাঁচজনের নাম অনতিবিলম্বে এই মামলা থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা চাই না মামলা সংক্রান্ত জটিলতার মধ্য দিয়ে তাঁরা আদালত প্রাঙ্গনে বছরের পর বছর ঘুরুক।’
স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী এবং স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন প্রধানের কাছে গিয়েছি, স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইনটি যেন অনতিবিলম্বে প্রনয়ণ করা হয়। আমরা দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। নিজেদের পক্ষে এর পর্যালোচনামূলক প্রতিবেদন ও প্রস্তাবিত সমাধানও দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা আইন সম্মিলিতভবে একই সঙ্গে বাস্তবায়ন করার জটিলতা আছে। সে ক্ষেত্রে আপনারা আইনটিকে দুই বা তিনভাগে ভাগ করেন। তবে আমরা বর্তমানে প্রক্ষাপটে দেখতে পাচ্ছি চিকিৎসকরা অনিরাপত্তায় ভুগছেন। এজন্য অনতিবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।’
এসআই/এনএআর/