মেডিভয়েস রিপোর্ট: দেশে প্রথমবারের মতো গুরুতর দগ্ধ রোগীদের জন্য চালু হয়েছে ‘স্কিন ব্যাংক’। দান করা চামড়া সংরক্ষণ করা হবে এই ব্যাংকে। এতে প্রয়োজনের সময়ে রোগীর শরীরে চামড়া প্রতিস্থাপনের কাজ আরও সহজ ও দ্রুততর হবে। এটি রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে আনার পাশাপাশি দ্রুত নতুন চামড়া তৈরিতে সহায়তা করবে।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এই স্কিন ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। তবে ইতোমধ্যে চারজন দাতার চামড়া দুজন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ওই রোগীদের শারীরিক অবস্থার উন্নতিও লক্ষ্য করা গেছে।
জানা গেছে, চামড়া প্রতিস্থাপন করা রোগীদের দুজনই শিশু। এর মধ্যে ১৩ তলার সি-১৩৩৩ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন দুই বছরের শিশু হামিদার শরীরের ৩৫২.৫ সেন্টিমিটার চামড়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর গরম পানিতে পুড়ে হামিদার শরীরের ৪২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার মা রাবেয়া বেগম গণমাধ্যমকে জানান, ফলে তার রক্তে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ (সেপ্টিসেমিয়া) দেখা দেয় এবং ক্ষত থেকে ক্রমাগত রক্ত ও পুঁজ বের হচ্ছিল। চিকিৎসকরা ১৪ জানুয়ারি স্কিন ব্যাংক থেকে সংগৃহীত চামড়া প্রতিস্থাপন করলে সংক্রমণ কমতে শুরু করে।
আরেক শিশু মরিয়মের (৮) শরীরের ৭৭৯ সেন্টিমিটার পোড়া অংশ ঢেকে দেওয়া হয়েছে স্কিন ব্যাংকের সংরক্ষিত চামড়া দিয়ে। তার মা মজেমা বেগম জানান, গ্যাসের চুলার আগুনে পুড়ে শরীরের ২২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। চিকিৎসকরা চামড়া প্রতিস্থাপনের পর তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গুরুতর দগ্ধ হলে শরীর থেকে পানি, লবণ, প্রোটিন ও তাপ দ্রুত বেরিয়ে যায়। যদি পোড়ার পরিমাণ বেশি হয় এবং রোগীর শরীর থেকে চামড়া নেওয়া সম্ভব না হয়, তখন স্কিন ব্যাংক থেকে সংরক্ষিত চামড়া প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমে এবং দ্রুত নতুন চামড়া তৈরি হতে সহায়তা করে।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বার্ন ইনস্টিটিউটের ১২৩৯ নম্বর কক্ষে স্কিন ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। এখানে উন্নত প্রযুক্তির আটটি বিশেষ ফ্রিজের মাধ্যমে সংরক্ষণ প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। সুস্থ ব্যক্তিরা জীবদ্দশায় একাধিকবার চামড়া দান করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগের মাধ্যমে শরীরের নির্দিষ্ট অংশ অবশ করা হয়। বিশেষ ডার্মাটম যন্ত্রের সাহায্যে শরীরের সুবিধামতো স্থান থেকে চামড়া সংগ্রহ করা হয়। দাতার হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন নেই, ১৪ দিনের মধ্যেই শরীরে নতুন চামড়া তৈরি হয়ে যায়। মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও ৬ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব, যদি লাশ সংরক্ষিত থাকে। সাধারণত পিঠ ও পা থেকে চামড়া সংগ্রহ করা হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, চামড়া দানে আইনগত কোনো বাধা নেই। স্কিন ব্যাংকের মাধ্যমে দান করা চামড়া সংরক্ষণ ও প্রতিস্থাপন পুরোপুরি নিরাপদ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কিন ব্যাংক একটি স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভারতে এটি দীর্ঘদিন ধরে চালু রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে স্কিন ব্যাংকের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হলে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা অনেক সহজ হবে। পর্যাপ্ত দাতার অংশগ্রহণ থাকলে এটি দগ্ধ রোগীদের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এনএআর/