মেডিভয়েস রিপোর্ট: জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাসে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। আজ সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে নারী মৈত্রী আয়োজিত ‘তরুণদের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ-২০২৫: গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ পাসের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তরুণরা সুস্থ্য থাকলে দেশও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে।’
নারীমৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বিশ্বস্বাস্থ্য অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি, বাংলাদেশ ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, এবং বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক।
নারী মৈত্রীর প্রকল্প সমন্বয়ক নাসরিন আক্তার বলেন, ‘বাংলাদেশে তামাকের কারণে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ প্রাণ হারান। মৃত্যুর এই মিছিল ঠেকাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) আলোকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস করা জরুরি।’
এ সময় প্রস্তাবিত আইনের উল্ল্যেখযোগ্য ছয়টি সংশোধনী তুলে ধরেন তিনি। এগুলো হলো—
১. পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা।
২. তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা।
৩. বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
৪. তামাক কোম্পানির কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
৫. সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়ানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
৬. ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করতে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো মিথ্যা প্রচার করছে। তারা বলছে প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাস হলে সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাবে। তবে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও ২০১৩ সালে সংশোধনের পর গত ১৮ বছরে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে সাড়ে ১২ গুণ। একই সঙ্গে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে তামাক ব্যবহার ১৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হলে তামাক খাতে জড়িত ১৫ লাখ খুচরা বিক্রেতা তাদের কর্মসংস্থান হারাবে বলে দাবি করে তামাক কোম্পানিগুলো। কিন্তু বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায় জরিপ-২০২১ অনুযায়ী, দেশে মোট খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৫ লাখ ৩৯ হাজার, যার মধ্যে খাদ্য, পানীয় ও তামাকপণ্য বিক্রি করে এমন দোকানের সংখ্যা মাত্র এক লাখ ৯৬ হাজার ৩৪১টি। তাছাড়া, এসব দোকানে সাধারণত অন্যান্য পণ্যের সঙ্গেই তামাকপণ্য বিক্রি হয়, তাই আইনটি পাস হলে তাদের কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব পড়বে না।
অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য অনুবিভাগ) শেখ মোমেনা মনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক্সিকিউটিভ কমিটির রিভিউ মিটিংয়ে আজকের আলোচনার বিষয়টি আমরা উপস্থাপন করব এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাসের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।’
সভায় তামাকবিরোধী তরুণ ফোরামের আহ্বায়ক আশরাফিয়া জান্নাত বলেন, ‘প্রতিদিন তামাকজনিত কারণে ৪৪২ জন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, অথচ আমাদের সমাজ এখনো নীরব। সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে ওঠা আমাদের অধিকার। তাই সংশোধনী দ্রুত বাস্তবায়ন করে, আমাদের একটি সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর সমাজ উপহার দিন।’
সভায় তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরাম, শিক্ষক ফোরাম, গার্লস গাইড রেঞ্জার এবং রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরাও তামাক নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ-২০২৫ দ্রুত পাসের জোরালো দাবি জানান।
এসএইচবি/এনএআর/