মেডিভয়েস রিপোর্ট: গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত দুই শিক্ষার্থীর ইমামতিতে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে খতমে তারাবীহ। মেডিকেল কলেজের মসজিদে এ তারাবীহ চলছে। ইমামতি করছেন মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী হাফেজ মেহেদী হাসান তাওহীদ ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হাফেজ আবদুল কাইয়ুম।
গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. অমল চন্দ্র পাল মেডিভয়েসকে বলেন, ‘এটা খুবই আনন্দের ব্যাপার যে আমাদের মেডিকেল শিক্ষার্থীরা খতমে তারাবীহ পড়াচ্ছে। ধর্মীয় চর্চা, ধর্মীয় রীতে-নীতি এগুলো আমাদের সমাজে কল্যাণের জন্য। এই রীতি-নীতি আমাদের শিক্ষার্থীরা মেনে চলে, এটা অন্যরকম আনন্দের ব্যাপার।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক সময় অনেক বিষয় বুঝি না, ভুল ব্যাখ্যা আসে যেটা সমাজে অনেক ধরনের অশান্তি সৃষ্টি হয়। ওরা হাফেজ এবং মেডিকেল সায়েন্সে পড়ালেখা করছে, সমাজের সব লেভেলের মানুষের সঙ্গে বোঝাপড়া থাকবে, সুতরাং ওরা মানুষের কাছে সঠিক প্রচারণা করতে পারবে। ওদের ধর্মীয় একটা বেইজ আগেই তৈরি হয়ে গেছে, যা চিকিৎসা পেশায় নৈতিকতা ঠিক রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’
অধ্যক্ষ আরো বলেন, ‘কোরআনের হাফেজ হয়েও তারা যে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করে কঠিন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে, সেটাও দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক।’
অনুভূতির কথা জানিয়ে হাফেজ মেহেদী হাসান তাওহীদ মেডিভয়েসকে বলেন, আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে হেফজখানায় ভর্তি হই। তারপর হাফেজি পাস করে সরাসরি অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করি। দাখিল ও আলিমে তারাবীহ পড়ালেও মেডিকেলে প্রথম চার বছর তারাবীহ পড়ানো হয়নি। কিন্তু নিয়মিত তেলাওয়াত করতাম। তবে এবার নিজ ক্যাম্পাসে তারাবীহ পড়াচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ।
‘যারা হাফেজ এবং মেডিকেলে পড়তে চায় তাদেরকে বলবো—আসলে আল্লাহ আমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন মানব কল্যানের জন্য, সে ক্ষেত্রে দ্বীনি ইলম অর্জন করা ও কোরআনকে ধারণ করা এবং মানুষের সেবা করার জন্য আরো একটি সুযোগ হচ্ছে চিকিৎসা পেশা। আল্লাহ যে উদ্দেশ্যে আমাদের পাঠিয়েছেন, যদি সম্ভব হয় উভয় দিক দিয়েই অর্থাৎ চিকিৎসা জ্ঞান এবং দ্বীনি ইলম দুইটাই সমন্বয় করা। আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া যে, পবিত্র কোরআন ধারণ করেছি এবং ধরে রাখার চেষ্টা করছি এটাই আমার সেরা অনুভূতি’—যোগ করেন তিনি।
হাফেজ আবদুল কাইয়ুম মেডিভয়েসকে বলেন, আমরা যখন হাফেজি পড়ি, তখন তেলাওয়াত যে যত বেশি করবে তার হিফজ ঠিক থাকার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। আমি যখন হাফেজ হয়েছি অনেক বেশি তেলাওয়াত করেছি, যার কারণে নিয়মিত চর্চা না করলেও রমজানের চর্চা দিয়েই হয়ে যায়। হাফেজ হওয়ার পর থেকে টানা অনেক বছর তারাবীহ পড়িয়েছি, তবে নিজ মেডিকেল ক্যাম্পাসে এটিই প্রথম। তাই আনন্দটাও একটু বেশি।
মাদরাসা বা হাফেজ শিক্ষার্থীরা মেডিকেল শিক্ষায় আরো বেশি আসা উচিত উল্লেখ করে এই হাফেজে কোরআন বলেন, ‘আমরা যারা দ্বীন বুঝি, আমরা যদি এই সেক্টরে আসি, তা ইসলামের জন্য অনেক বড় কল্যাণকর হবে। দোয়া করি, গোপালগঞ্জ মেডিকেলসহ সকল মেডিকেল কলেজেই নতুন নতুন হাফজ চান্স পাক এবং কলেজে শিক্ষার্থীদের দ্বারাই খতমে তারাবীহ পরিচালিত হওয়ার চর্চা ছড়িয়ে পড়ুক সব ক্যাম্পাসে।’
এসআই/এনএআর/