মেডিভয়েস রিপোর্ট: জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইওএইচ) জুলাই যোদ্ধাদের একাংশের বিরুদ্ধে পরিচালক কক্ষে প্রবেশ করে ভাঙচুর এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। হামলার প্রতিবাদে চিকিৎসক-নার্সরা হাসপাতালের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতেও হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন প্রায় দেড়শ’ রোগী হাসপাতাল ত্যাগ করেন বলে জানা গেছে।
আজ বুধবার (২৮ মে) বেলা ১১টার দিকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ও হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এনআইওএইচ পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বিকেলে মেডিভয়েসকে বলেন, ‘মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় কিছুদিন যাবৎ জুলাই যোদ্ধারা হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পথ আটকে রেখে দুর্ব্যবহার করে, মারধর করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসক, নার্স এবং হাসপাতালের অন্যান্য স্টাফরা আজ কর্মবিরতিতে যান। পরবর্তীতে কিছু বহিরাগত ও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসাধীন জুলাই যোদ্ধারা একত্রিত হয়ে চিকিৎসকদের উপর হামলা করে এবং হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়। এতে চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফসহ প্রায় ১৫ জন আহত হন। আতঙ্কিত হয়ে দেড়শ’ সাধারণ রোগী হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে গতকাল ২৮ মে রাতে তিন-চারজন জুলাই যোদ্ধা আমার রুমে আসে এবং চিকিৎসা-সংক্রান্ত নানা বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলে। কথোপকথনের সময় দেখা যায়, তাদের মধ্যে অনেক উপদল রয়েছে। দুই-তিন দিন আগে তারা বিষপান করার চেষ্টা করে এবং বর্তমানে একজন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি আছে। ওই চারজন আমার রুমে অবস্থানরত তিনজনকে আক্রমণ করে এবং অভিযোগ তোলে যে, তাদের নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন যেসব সহযোগিতা করেছে, তা নিয়েও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা যায়। ঝগড়াঝাটির একপর্যায়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪০-৫০ জন হঠাৎ আমার রুমে ঢুকে পড়ে এবং আমি মাঝখানে পড়ে যাই।’
এনআইওএইচ পরিচালক বলেন, ‘তারা নিজেদের মধ্যেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। আমি প্রায় দেড় থেকে পৌনে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলাম। আমি তখন শেরেবাংলা নগর থানায় বিষয়টি জানাই। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে সেনাবাহিনীকে জানানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসার পরে আহত জুলাই যোদ্ধাদের একটি অংশ ও হাসপাতালের স্টাফরা মানববর্ম তৈরি করে আমাকে বের করে নিয়ে যায়। আমি বের হওয়ার পর তারা আমার কক্ষে ভাঙচুর করে এবং পেট্রোল ঢেলে দেয়।’
এসব ঘটনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। পরে তাকে সাত দিনের ছুটি দেওয়া হয়। অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন ‘বর্তমানে আমার অনুপস্থিতিতে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন ডা. জানে আলম।’
জানতে চাইলে আহত জুলাই যোদ্ধা শিমুল বিকেলে মেডিভয়েসকে বলেন, ‘চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের স্টাফরা আমাদের ঘুমন্ত সহযোদ্ধাদের উপর হামলা করেছে এবং হুমকি দিয়েছে, তাদেরকে খাসির মতো করে পিচ পিচ করে কেটে রান্না করা হবে। হামলায় আমাদের কয়েকজন আহত হন এবং চিকিৎসার জন্য তাদেরকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে হামলায় জড়িত স্টাফরা পালিয়ে যায়।’
ছবিতে স্টাফদের উপর হামলা করতে দেখা গেছে, তা কীভাবে হলো—জানতে চাইলে এই জুলাই যোদ্ধা বলেন, ‘আমরা হামলা করিনি, আত্মরক্ষার্থে শুধু ভয় দেখিয়েছি।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বরাতে এ ঘটনায় প্রায় ১৫ জন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী আহত হওয়ার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারাই আমাদের সবাইকে আহত করেছে, হাসপাতাল ভাঙচুর করেছে, তারপর পালিয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে জানতে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমামুল হককে একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
টিআই/এমইউ