মেডিভয়েস রিপোর্ট: আজ ৩১ মে, বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিশ্বের নানা দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে সচেতনতা বৃদ্ধির নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশও ‘তামাক কোম্পানির কৌশল উন্মোচন করি, তামাক ও নিকোটিনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি’ প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালন করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন কিশোর-কিশোরী (১৩–১৫ বছর বয়সী) তামাক ব্যবহার করছে। তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে তামাক কোম্পানিগুলো নানা রকম চটকদার প্যাকেট, ফ্লেভার এবং বিজ্ঞাপনী কৌশল ব্যবহার করছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে।
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স টু এন্ড টোব্যাকোর ২০২২ সালের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ১৫-ঊর্ধ্ব আনুমানিক ৩৯.৫ মিলিয়ন মানুষ (তিন কোটি ৯৫ লাখ) তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করেন। এর মধ্যে তিন কোটি চার লাখ পুরুষ এবং ৯২ লক্ষ নারী। এই সংখ্যার ভিত্তিতে, বাংলাদেশ তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যায় বিশ্বে পঞ্চম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
এ ছাড়া টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্যমতে, দেশে প্রতি বছর প্রায় এক লক্ষ ৩০ হাজার ১৩৫ জন তামাকজনিত রোগে মারা যান। তামাক ব্যবহারের কারণে বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় প্রায় ৩৯ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা।
এদিকে তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তামাকজনিত রোগে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। হৃদরোগ, ক্যান্সার, স্ট্রোক, শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা, অ্যাজমা ও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী ও প্রাণঘাতী রোগের পেছনে তামাক অন্যতম প্রধান কারণ।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সব ধরনের তামাকজাত পণ্য স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তামাক কোম্পানিগুলো তরুণদের লক্ষ্য করে আকর্ষণীয় প্যাকেজিং ও নিত্যনতুন ডিজাইনে তামাকপণ্য বাজারজাত করছে। আমাদের যুব সমাজকে এই ফাঁদ থেকে রক্ষা করতে হলে তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।’
এ বছর বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘তামাক কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচন করি, তামাক ও নিকোটিনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি’। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত সময়োপযোগী।’
তিনি আরও জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে ই-সিগারেট ও সংশ্লিষ্ট পণ্যের আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে এবং প্রচলিত তামাকপণ্যের ওপর কর বৃদ্ধি করেছে। একইসঙ্গে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) অনুযায়ী শক্তিশালীকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
চিকিৎসক, পেশাজীবী, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, বেসরকারি সংস্থাসহ সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক। আমি বিশ্বাস করি, সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে আগামী প্রজন্ম তামাক ও নিকোটিনের সর্বনাশা ছোবল থেকে মুক্তি পাবে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তামাক ও নিকোটিনমুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়তে হলে নীতিমালায় কঠোরতা আনতে হবে, বাড়াতে হবে জনসচেতনতা। তরুণ সমাজকে সুরক্ষিত রাখতে এই আন্দোলন শুধু একটি দিবস নয়, এটি হতে হবে প্রতিদিনের প্রতিজ্ঞা।
এনএআর/