মেডিভয়েস রিপোর্ট: রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সনদ ৫ বছরের জন্য স্থগিত করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। এর ফলে আগামী ৫ বছর চিকিৎসা পেশায় যুক্ত থাকতে পারবেন না তিনি।
শনিবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় বিএমডিসির মিটিংয়ে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে মেডিভয়েসকে জানিয়েছেন কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. লিয়াকত হোসেন।
তিনি বলেন, ‘চিঠির মাধ্যমে মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলকে বিষয়টি জানানো হবে। দুই-এক দিনের মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। আমাদের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হবে।’
মিটিংয়ে ডা. স্বপ্নীলের সনদ স্থগিত করাসহ আরো অনেক এজেন্ডা ছিল বলেও জানান বিএমডিসি রেজিস্ট্রার।
দুই বছর আগে প্রকৌশলী আফসার আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে তার বিরুদ্ধে ‘দায় খুঁজে পাওয়া’ গেছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ওই প্রকৌশলীর মৃত্যুর ঘটনায় ল্যাবএইড হাসপাতালের বিরুদ্ধেও মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ এসেছে।
গত ১৬ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিএমডিসি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দেয়। পরে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ওই কপি আফসার আহমেদের পরিবারের হাতে আসে মঙ্গলবার।
বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডা. মো. লিয়াকত হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠি তারা পেয়েছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপ সচিব শারাবান তাহুরার সই করা বিএমডিসির রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক মামুন আল মাহতাবের (স্বপ্নীল) বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আফসার আহমেদের এন্ডোস্কপিকালীন মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছেন।
‘ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী দায়িত্বে অবহেলার কারণে অধ্যাপক মামুন আল মাহতাবের (স্বপ্নীল) ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হলো।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক চিকিৎসক মো. আবু জাফরকে পাঠানো মন্ত্রণালয়ের আরেক চিঠিতে বলা হয়, ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বিরুদ্ধে প্রকৌশলী আফসার এন্ডোস্কপিকালীন ‘এন্ডোস্কটপিকালীন’ মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী এবং গুরুত্ব বিবেচনায় ল্যাবএইড হাসপাতালের বিষয়ে ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নিতে বলা হয়েছে চিঠিতে।
২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর ছাতক উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী আফসার আহমেদ ধানমন্ডির বেসরকারি ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান। তিনি চিকিৎসক স্বপ্নীলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এবং ওই দিন এন্ডোস্কপি করাতে এসেছিলেন।
ওই ঘটনার সাড়ে চার মাস পর চিকিৎসক স্বপ্নীল ও ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগ করেন আফসার আহমেদের ভাই খায়রুল বাশার।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের কাছে লিখিত অভিযোগে বাশার ‘চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, অবহেলা ও গাফিলতির’ কারণে তার ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত দাবি করেন।
বাশার তার ভাইয়ের মৃত্যুর দিনের বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর ধানমন্ডির ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের কাছে চিকিৎসা নিতে যান তার ভাই। ডা. স্বপ্নীল রোগীকে দেখে ব্যবস্থাপত্র দেন সেখানে অ্যান্ডোস্কপি, কোলনস্কপিসহ কয়েকটি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। চার দিন পর ৯ নভেম্বর এন্ডোস্কপি ও কোলনস্কপির পরীক্ষার সময় দেন। সে অনুযায়ী ৯ নভেম্বর সকাল ৯টায় ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতাল যান আফসার আহমেদ।
অভিযোগে বলা হয়, এন্ডোস্কপি করার দিন হাসপাতালে যাওয়ার পর তাকে জানানো হয় বিকাল ৪টায় অ্যান্ডোস্কপি করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সকালে শুরু করা হলেও পরীক্ষাটি করা হয় রাত ৮টায়।
‘ডা. স্বপ্নীল এসে রোগীর শারীরিক অবস্থার কোনো পর্যবেক্ষণ না করে, কোনো ধরনের প্রি-ইভালুয়েশন ছাড়াই অ্যানেস্থিশিয়া প্রয়োগের নির্দেশ দেন। এরপর তিনি টেস্ট করানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। টেস্ট করানোর এক পর্যায়ে আমার ভাইকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলা আমার ভাইয়ের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। তাই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হচ্ছে। সেদিন রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে হাসপাতাল থেকে আমাদের জানানো হয় আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে’—যোগ করেন বাশার।
এ ছাড়া রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাহিব রেজার মৃত্যু হয়েছে। এর মূল দায় অস্ত্রোপচার দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের। গত বছরের ২৩ অক্টোবর হাইকোর্টে দাখিল করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম কিবরিয়ার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে রাহিব রেজার মৃত্যুতে ডা. স্বপ্নীলের অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে কমিটি।
এমআই/এমইউ