আগামী ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে ৪৮তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা। এর মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হবে তিন হাজার চিকিৎসক। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ইতোমধ্যেই এ বিসিএসের টাইমলাইন প্রকাশ করেছে। লিখিত (এমসিকিউ) পরীক্ষার পর দ্রুতই নেওয়া হবে মৌখিক পরীক্ষা। ২২ সেপ্টেম্বর নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
তুমুল প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষায় সময়ের যথাযথ ব্যবহার ও শেষ সময়ে পরীক্ষার প্রস্তুতিসহ নানা কৌশল নিয়ে মেডিভয়েসের সঙ্গে কথা বলেছেন ৪২তম বিশেষ বিসিএসের মেধাতালিকায় দ্বিতীয় অবস্থান অর্জন করা ডা. মাসনূন বিল্লাহ। পাশাপাশি দিয়েছেন নানা মূল্যবান পরামর্শ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওমর ফারুক ফাহিম।
মেডিভয়েস: স্বল্প সময়ে কোন বিষয়গুলোতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত?
মাসনূন বিল্লাহ: প্রথমেই যেসব বিষয়ে আপনি তুলনামূলকভাবে ভালো—সেগুলোকেই বেশি গুরুত্ব দিন, যেন সেসব বিষয়ের কোনো প্রশ্ন মিস না হয়। দুর্বল বিষয়ের পেছনে অনেক সময় দিলেও হয়তো ৩-৪ নম্বর বাড়তে পারে, কিন্তু একই সময় নিজের দক্ষতার বিষয়ের পেছনে ব্যয় করলে নম্বর আরও বেশি বাড়বে। এছাড়া যেসব বিষয়ের সিলেবাস অপেক্ষাকৃত ছোট, যেমন—ইংরেজি সাহিত্য, গণিত, সাধারণ জ্ঞান এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি—এসব ‘হাই ইয়িল্ড’ টপিক (যা পরীক্ষায় বারবার আসে) বেশি করে পড়ার চেষ্টা করুন।
মেডিভয়েস: মেডিকেল অংশের প্রস্তুতি কীভাবে নেওয়া উচিত?
মাসনূন বিল্লাহ: মেডিকেল অংশের জন্য যে কোনও ভালো কোচিংয়ের প্রকাশিত গাইড পড়া যেতে পারে। তার চেয়েও ভালো হয় যদি এফসিপিএস বা এমডি ভর্তি পরীক্ষার রিডিং ম্যাটেরিয়ালগুলো একবার রিভাইস দেওয়া যায়। পাশাপাশি Rodd, Lumley, Smiddy ইত্যাদি বইও পড়া উচিত। প্রচুর প্রশ্ন অনুশীলন করতে হবে—যে কোনো ধরনের এমসিকিউ চোখে পড়লেই সমাধান করতে হবে।
মেডিভয়েস: প্রস্তুতি ভালোভাবে নিতে কোন বই বা সোর্স সবচেয়ে বেশি সহায়ক?
মাসনূন বিল্লাহ: নির্দিষ্ট কোনো সোর্স বা গাইডের নাম বললে সেটি ব্র্যান্ডিং হয়ে যাবে, তাই যেসব রিসোর্স সাধারণভাবে পরীক্ষার্থীরা পড়েন, সেগুলোই নিয়মিত পড়া উচিত।
মেডিভয়েস: চাকরি বা ইন্টার্নশিপের ব্যস্ততার মধ্যেও কার্যকরভাবে প্রস্তুতির কৌশল কী?
মাসনূন বিল্লাহ: সর্বোত্তম কৌশল হলো ছুটি নেওয়া। তবে যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে দায়িত্বের মাঝেই পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে হবে। আমি নিজে বাসায় ফ্রি টাইমে রিডিং ম্যাটেরিয়াল পড়তাম, আর ডিউটির ফাঁকে শুধু প্রশ্ন সলভ করতাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রাইভেট চাকরি করেও একদিনও ছুটি নিইনি।
মেডিভয়েস: প্রশ্ন ব্যাংক কতটা কাজে দেয়? এতে কতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত?
মাসনূন বিল্লাহ: প্রশ্ন ব্যাংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তত বিগত ১০ বছরের প্রশ্ন মুখস্থ করে ফেলতে হবে এবং কয়েকবার সমাধান করাও জরুরি।
মেডিভয়েস: পরীক্ষার হলে টাইম ম্যানেজমেন্ট ও প্রশ্ন বাছাইয়ে করণীয় কী?
মাসনূন বিল্লাহ: টাইম ম্যানেজমেন্ট কিছুটা কৌশল নির্ভর। ২০০টি প্রশ্নের জন্য ২ ঘণ্টা সময় পাওয়া যায়। আপনি চাইলে সময় ভাগ করে নিতে পারেন যেমন—
১-৫০: ২৫ মিনিট
৫১-১০০: ৫০ মিনিট
১০১-১৫০: ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট
১৫১-২০০: ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে শেষ
প্রথম ঝলকে যেসব প্রশ্ন ১০০% নিশ্চিত, সেগুলোতেই আগে দাগ দিন। তারপর নির্ধারণ করুন কতগুলো প্রশ্ন আপনি আন্দাজে চেষ্টা করবেন। যেমন, যদি আপনি ১০০টি প্রশ্ন নিশ্চিত হন, তাহলে কিছু আন্দাজ করতে হবে। কিন্তু যদি ১২৫টি নিশ্চিত পান, তাহলে ঝুঁকি নেওয়া কমিয়ে দিন কারণ নেগেটিভ মার্কিং আছে।
এই দক্ষতা রপ্ত করতে হলে বাড়িতে অনেকগুলো ২০০ নম্বরের মডেল টেস্ট দেওয়া দরকার। সম্ভব হলে ওএমআর শিট অনলাইনে ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিয়ে অনুশীলন করুন।
মেডিভয়েস: মানসিক চাপ সামলে আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে ভালো করার কৌশল কী হতে পারে?
মাসনূন বিল্লাহ: স্ট্রেস থেকে মুক্তির নির্দিষ্ট কোনো উপায় নেই। মূল কথা হলো আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা। তিনিই চাকরি দিলে হবে, না দিলে হবে না। পরীক্ষার হলে মাথা ঠান্ডা রাখার অভ্যাস করতে হলে বেশি বেশি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এর বিকল্প নেই।
মেডিভয়েস: এখন কি ভাইভার জন্যও পড়া উচিত, নাকি শুধু প্রিলিতে ফোকাস করলেই হবে?
মাসনূন বিল্লাহ: এই মুহূর্তে কেবল প্রিলির জন্যই পড়াশোনা করুন। কারণ প্রিলির নম্বরই চূড়ান্ত ফলে যোগ হয়। ভাইভায় আপনি যদি খুব ‘আনস্মার্ট’ আচরণ না করেন, তাহলে গড় নম্বর পাবেন। এই এক মাসে স্মার্টনেস বাড়ানোর সুযোগ নেই। ভাইভায় মূলত আপনার আচরণই মূল্যায়ন করা হয়। তাই আপাতত কেবল প্রিলিতে ফোকাস রাখুন।
ওএফএফ/এনএআর/