মেডিভয়েস রিপোর্ট: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে (শেবাচিম) নবাগত ৫৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বোনস দেয়ার মাধ্যমে শেবাচিম বোনস ব্যাংকের যাত্রা যাত্রা শুরু হয়েছে। রোববার (২২ জুন) দুপুর আড়াইটায় কলেজের দুই নম্বর গ্যালারিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৪৩ জন শিক্ষার্থীকে ১৮ সেট বোনস প্রদান করা হয়। এ সময় ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত ইনকিলাব শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংসদের একাডেমিক উইংয়ের একটি প্রজেক্ট হলো শেবাচিম বোনস ব্যাংক।
বোনস ব্যাংক পরিচালক ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবাইর আহমেদ মেডিভয়েসকে বলেন, ‘মোট ৮০ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তাদের মধ্য হতে ৪৩ জনকে আমরা প্রথম ধাপে বোনস তুলে দিয়েছি। ক্রমান্বয়ে আরো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আবেদনকারীর কাছে আমরা বোনস সেট পৌঁছে দেবো। বোনস দেয়ার সময় আমরা শিক্ষার্থীদের কিছু শর্ত দিয়েছি। প্রতি দুই কিংবা তিনজনকে এক সেট করে বোনস দেয়া হয়েছে। যাদের দুইজনকে একসেট দেয়া হয়েছে, তাদের থেকে পাঁচ হাজার টাকা এবং যাদের তিনজনকে একসেট দেওয়া হয়েছে, তাদের থেকে চার হাজার টাকা করে জামানত নেয়া হয়েছে। প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষা শেষে বোনস ফেরত দেয়ার সময় তাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদেরকে এ কাজে যারা সহযোগিতা করেছেন, বিশেষ করে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যারা বোনস সেট দান করেছেন কিংবা স্বল্পমূল্যে আমাদের কাছে বিক্রি করেছেন কিংবা বোনস ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন, সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’
ইনকিলাব শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংসদের ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিফাত মাহমুদ বলেন, ‘শহীদ আবরার ফাহাদ ও জুলাইয়ের শহীদদের স্মৃতি জাগরুক রাখার জন্য আমরা বোনস সেটগুলোর নাম শহীদদের নামে রেখেছি। শহীদ ডা. সজীব সরকার স্মৃতি বোনস সেট নামে আমাদের প্রথম বোনস সেটের নাম রেখেছি এবং বাকিগুলো অন্যান্য শহীদদের নামে রেখেছি। জুলাই না আসলে আমাদের এসব প্রজেক্ট হাতে নেয়ার সুযোগ আসতো না। জুলাইয়ের শহীদেরা ইনকিলাবের সকল কাজের অনুপ্রেরণা।’
ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক ৫১তম ব্যাচের তাওহীদুল ইসলাম সিয়াম মেডিভয়েসকে বলেন, তিনটি কারণে প্রজেক্টটি হাতে নেওয়া হয়েছে, যথা—
১. বোনস ক্রয়-বিক্রয়ের সংস্কৃতি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত করা,
২. মেডিকেলে এসে এক শিক্ষার্থী যেন হাজার হাজার টাকা ব্যয়ে বোনস কিনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় না পড়েন এবং
৩. স্বৈরাচার সরকারের আমলে শিক্ষার্থীদের প্রতি দুইজনকে চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকায় বোনস ধরিয়ে দিতো ছাত্রলীগ। তখন শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের নেতাদের থেকে বোনস কিনতে বাধ্য করা হতো। ইনকিলাব শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংসদ এ ধরনের সংস্কৃতি ভেঙে দিতে বদ্ধপরিকর।
পরিষদের নেতৃবৃন্দ জীবিত মানুষের মতো বোনসগুলোর যত্ন নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অযত্নে যেন বোনস ফেলে না রাখা হয়। এই সুন্দর সংস্কৃতি যেন তারা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়।
এদিকে উদ্যোগটিকে প্রশংসনীয় মনে করছেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বোনস গ্রহণকারী শেবাচিম ৫৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইহতেশামুল হক আছীর মেডিভয়েসকে বলেন, ‘বোনস ব্যাংক থাকায় আমাদের অনেক উপকার হলো। আমাদেরকে বোনস কিনে হারাম কাজে জড়িত হতে হলো না। পাশাপাশি একসাথে অনেকগুলো টাকা বোনসের পিছনে খরচও করতে হলো না। সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য এটি একটা কার্যকরী পদক্ষেপ হবে।’