মেডিভয়েস রিপোর্টধ: বিশ্বজুড়ে ২৫ এপ্রিল পালিত হয় বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। তবে বাংলাদেশে এবার দিবসটি পালন করা হচ্ছে এক দিন আগেই, ২৪ এপ্রিল। এবারের প্রতিপাদ্য—‘আমরাই করবো ম্যালেরিয়া নির্মূল: নব উদ্যমে, নব বিনিয়োগে ও নব চিন্তায়’—দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ শাখা থেকে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীনে দেশের ১৩টি জেলার ৭৭টি উপজেলায় এখনো ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ বিদ্যমান। এর মধ্যে বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সবচেয়ে বেশি সংক্রমণপ্রবণ।
২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮৫% এবং মৃত্যুহার ৯৬% হ্রাস পেয়েছে। চলতি বছরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৩,০৯৯ জন এবং মারা গেছেন ছয় জন। মোট রোগীর ৯২ শতাংশই পাওয়া গেছে পার্বত্য তিন জেলায়।
ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের আটটি জেলার মধ্যে ছয়টি জেলায় স্থানীয় ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা শূন্য। এসব জেলা খুব শিগগিরই নির্মূল লক্ষ্যে পৌঁছাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
জাতীয় কর্মসূচির আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মাঝে দীর্ঘমেয়াদি কীটনাশকযুক্ত মশারি বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে এক কোটি ৬০ লাখের বেশি মশারি।
সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ‘আগত রোগী’ (ইমপোর্টেড ম্যালেরিয়া) বাড়ছে, যা অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক হচ্ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলাদা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে—দ্রুত রোগ নির্ণয়, মশারি বিতরণ এবং সচেতনতা কার্যক্রম।
২০২৩ সালে বান্দরবানের লামা উপজেলার চারটি সংক্রমণপ্রবণ গ্রামে তিন মাস অন্তর প্রতিরোধমূলক ওষুধ খাওয়ানো (টিডিএ) শুরু হয়। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে রাঙামাটির জুরাছড়ি ও বরকল উপজেলার ৩১টি গ্রামে একই কার্যক্রম চালানো হয়েছে। ২০২৫ সালে এই কার্যক্রম আরও ৩৫টি গ্রামে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
তাছাড়া বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার ১০০টি গ্রামে ১২ হাজার মানুষের মধ্যে ম্যালেরিয়া ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে গণ ওষুধ প্রয়োগ কর্মসূচিও (এমডিএ) চালানো হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ওরিয়েন্টেশন, উঠান বৈঠক, পোস্টার, স্টিকার, বিলবোর্ড, মাইকিংসহ বিভিন্ন প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দুর্গম অঞ্চলে বিশেষ স্বাস্থ্য শিবির ও মোবাইল স্বাস্থ্য শিবির চালু রয়েছে। হাঁট-বাজার ও জনসমাগম এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করে সেখানে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এবং জনগণের সক্রিয় সহযোগিতাই হবে সফলতার চাবিকাঠি।’