মেডিভয়েস রিপোর্ট: এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৪ এ পাওয়া যাবে বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. মো. তৌছিফুর রহমানের লেখা বই ‘ক্যান্সার: সচেতনতায়ই মুক্তি’। বইটির মোড়ক উন্মোচন হতে যাচ্ছে আগামীকাল শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি)। বাবুই প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটি বইমেলার ২৬২, ২৬৩ ও ৮২৯ নং স্টলে পাওয়া যাবে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন জগদ্বন্ধু অধিকারী রঞ্জু।
বইয়ের উপজীব্য
বইয়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ডা. মো. তৌছিফুর রহমান মেডিভয়েসকে বলেন, বর্তমান পৃথিবীতে মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ছে ক্যান্সার। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় দুই কোটির অধিক মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং প্রায় এক কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। এই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত প্রতিটি মানুষ এবং তার পরিবারই জানেন কি নিদারুণ, দুর্বিষহ, শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক কষ্টের মধ্যে তাদেরকে দিনাতিপাত করতে হয়। ক্যান্সার আক্রান্ত হলে কীভাবে মোকাবেলা করতে হবে, তার গাইডলাইন ও মনোবল পাওয়া যাবে ‘ক্যান্সার: সচেতনতায়ই মুক্তি’ বইটিতে।
ক্যান্সার সম্পর্কে আমাদের সমাজে নানাবিধ বিরূপ ধারণা রয়েছে, যার কারণে ক্যান্সার চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং ক্যান্সার রোগীগণ অবহেলিত হচ্ছেন। মনে করা হয় ক্যান্সারে মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য যে, অনেক ক্ষেত্রেই ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য ও নিরাময়যোগ্য। রোগী ও রোগীর স্বজনদের সাথে মিশতে গিয়ে এবং সমাজের চরম বাস্তবতাগুলো দেখেছেন লেখক। তিনি তাদের মনের কথা, জিজ্ঞাসা ও ব্যাথার জায়গাটা উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছেন।
বইটি রচনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে লেখক বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যাতে ক্যান্সার সম্পর্কিত ন্যূনতম সঠিক ধারণা এবং বিভিন্ন ক্যান্সার জিজ্ঞাসার সঠিক জবাব পেতে পারেন। সেই সাথে একজন ক্যান্সার যোদ্ধার জন্য অনুকূল পৃথিবী গড়ে তোলাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য। এজন্যই এ বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে ক্যান্সারযোদ্ধাগণ ও তাদের পরিবারবর্গের প্রতি।’
লেখক জানান, এই বইটির মূল বার্তা হলো ক্যান্সারপূর্ব ও প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। বইটি লেখা তখনি সার্থক হবে, যদি এই বইটি দ্বারা একজন মানুষও সচেতন হন, একটি জীবনও যদি রক্ষা পায়, একটি পরিবারেও যদি ক্যান্সারযোদ্ধা মানুষটি দীর্ঘসময় আপনজনদের মাঝে প্রশান্তিতে কাটাতে পারেন।
একনজরে লেখক পরিচিতি
একজন প্রতিভাবান ও মানবদরদী চিকিৎসক হিসাবে যথেষ্ট সুপরিচিতি রয়েছে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. মো. তৌছিফুর রহমানের। তাঁর জন্ম ১৯৮৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানাধীন পোড়াদহ ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। ২০০৭ সালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকাতে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পান। এমবিবিএস শেষ করার পর (২০১৩) তিনি নিজেকে মানবিক কাজে নিয়োজিত করেন পিতা-মাতা ও সহধর্মিনী খালেদা ইফায়েত নূরীর প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণায়। তিনি স্বপ্ন দেখেন বয়স্ক ও দুর্দশাগ্রস্থ নিঃসঙ্গ মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর। তিনি বুঝতে পারেন বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীরা খুবই অবহেলিত ও দুর্দশার শিকার। সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের ক্যান্সার রোগীদের জন্য অনুকূল পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের। একই সাথে তার ইচ্ছা বিদেশমুখীতা কমিয়ে দেশেই উন্নত ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
এরপর ক্যান্সার বিষয়ে এম ডি (অনকোলজি) ডিগ্রী সম্পন্ন করে ২০২১ সালে স্কয়ার ক্যান্সার সেন্টার পান্থপথ, ঢাকায় ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হিসাবে যোগদান করেন। সেখানে সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে কেমোথেরাপী, রেডিওথেরাপী, হরমোন থেরাপী, ইমিউনোথেরাপী ও টার্গেটেড থেরাপী নিয়ে কাজ করেন এবং উচ্চতর গবেষণা সম্পন্ন করেন। প্রায় দেড় বছর কাজ করার পর ২০২২ সালে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে টি এম এস এস মেডিকেল কলেজ ও ক্যান্সার সেন্টার, বগুড়ায় যোগদান করেন। ডা. মো. তৌছিফুর রহমান দীর্ঘ প্রায় দশ বছর ক্যান্সার চিকিৎসায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। তিনি বাংলাদেশে আধুনিক পদ্ধতিতে ক্যান্সার চিকিৎসায় পরিবর্তন আনতে চান।
তিনি একাধারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, লেখক, গবেষক ও সমাজ সংস্কারক হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক। মেয়ে তাশরিফা ইফতিন তৌশি ও ছেলে তাবশীর তাহান। ডা. মো. তৌছিফুর রহমান বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় কার্যকর উন্নতি চান। এছাড়া ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যয় কমানো ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্যান্সার সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিরাময়ে অবদান রাখতে চান। এ ব্যাপারে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রচ্ছদ: জগদ্বন্ধু অধিকারী রঞ্জু
প্রকাশক: বাবুই প্রকাশনী
প্রকাশকাল: বইমেলা ২০২৪