মেডিভয়েস রিপোর্ট: সারাদেশে নয় জেলার বিভিন্ন স্থানে দুইদিনে বজ্রপাতে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২৭ এপ্রিল) ও আজ সোমবার (২৮ এপ্রিল) কুমিল্লার মুরাদনগর ও বরুড়া উপজেলায় চার জন, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে তিন জন, নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও মদনে দুই জন, সুনামগঞ্জের শাল্লায় একজন, হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে একজন, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় একজন, চাঁদপুরের কচুয়ায় একজন, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে একজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে একজন মারা গেছেন।
কুমিল্লার বরুড়া ও মুরাদনগরে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে মুরাদনগরে দুই কৃষক এবং বরুড়ায় দুই স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়।আজ দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানা এলাকায় বজ্রপাতে দুই কৃষক মারা যাওয়ার ঘটনাটি ডিউটি অফিসার মেডিভয়েসকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পশ্চিম পাড়ার মৃত বীর চরন দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৫৫) ও উপজেলার আন্দিকোট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে জুয়েল ভূঁইয়া (৩২) মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় আহত হন আরও ২ ব্যক্তি। তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অপর ঘটনায় বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। পরিবারের কোনও অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি শিশু আহত হয়েছে।
জানা গেছে, বরুড়া উপজেলার পয়ালগাছা গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) এবং বিল্লাল হোসেন ছেলে মোহাম্মদ জিহাদ (১৪) দুপুরে হালকা বৃষ্টির মাঝে মাঠে ঘুড়ি উড়াতে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে দুই ছাত্র মারাত্মকভাবে আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামে খয়েরপুর আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের হাওরে ধান কাটার সময় সকাল পৌনে ১০টার দিকে বজ্রপাতে ইন্দ্রজিৎ দাস (৩০) ও স্বাধীন মিয়া (১৫) নামে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। ইন্দ্রজিৎ উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের মৃত যতিন্দ্র দাসের ছেলে। স্বাধীন খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে। এতে আহত হয়েছেন একজন।
এছাড়াও একই গ্রামের শ্রমিক সহোদর দাস (৫০) বজ্রপাতে আহত হয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন।
অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রায় একই সময়ে মিঠামইন উপজেলার শান্তিগঞ্জ হাওরে বজ্রপাতে ফুলেছা বেগম (৬৫) নামের এক নারী নিহত হয়েছেন। তিনি ওই এলাকার মৃত আশ্রাব আলীর স্ত্রী।
মিঠামইন থানার এসআই অর্পণ বিশ্বাস বলেন, আজ সকালে বাড়ির পাশে ধানের খড় শুকাতে দিচ্ছিলেন ফুলেছা বেগম। এ সময় বজ্রপাত হলে নিহত হন তিনি।
নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধনুন্দ গ্রামে নিজ বাড়িতে রোববার (২৭ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে বজ্রপাতে আহত হন দিদারুল ইসলাম (২৮)। পরিবারের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি পাশের খারনৈ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় একটি ইফতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন।
তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষকের দাফনের জন্য পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
আজ সোমবার সকাল সাতটার দিকে মদন উপজেলার তিয়োশ্রী গ্রামে মো. আরাফাত (১০) বাড়ি থেকে বের হয়ে মাদ্রাসার উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। হঠাৎ করে একটি বজ্রপাতে তার শরীর ঝলসে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আরাফাত ওই গ্রামের সালাম মিয়ার ছেলে। সে তিয়োশ্রী মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তেন।
সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে আজ সকালে বজ্রপাতে রিমন তালুকদার নামের এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। রিমন আটগাঁও গ্রামের বাসিন্দা এবং শাল্লা ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে গ্রামের পাশের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যান রিমন তালুকদার। একপর্যায়ে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। রিমন তালুকদার নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার হাওরে বজ্রপাতে দুর্বাসা দাস (৩৫) নামে এক ধান কাটা শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ৩ জন। আজ সোমবার সকালে এই ঘটনা ঘটে। তাদের উপজেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তি উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের কালাবাসী দাসের ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন বানিয়াচং থানার (ওসি) গোলাম মোস্তফা। জানা গেছে, সকাল থেকেই উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের পূবের হাওরে ধান কাটছিলেন দুর্বাসা দাসসহ তার স্বজনরা। এসময় ঝড়ো বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত হলে দুর্বাসা দাস বজ্রাঘাতের শিকার হন। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এছাড়াও আহন হন তার ভাই ভূষণ দাস (৩৪) ও বোন সুধন্য দাস (২৮)।
এদিকে একই উপজেলার বাগহাতা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে বায়েজিদ মিয়া (১৩) নামে এক শিশু বজ্রাঘাতে আহত হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হবিগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আজাদুর রহমান বলেন, বজ্রাঘাতে নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হবে।
চাঁদপুর জেলার কচুয়ায় বজ্রপাতের বিকট শব্দে বিশাখা রানী (৩৫) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ১১টায় উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের নাহারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিশাখা ওই এলাকার কৃষক হরিপদ সরকারের স্ত্রী।
কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল ইসলাম জানান, বাড়ির পাশে স্বামী–স্ত্রী মিলে নিজ জমি থেকে ধান তুলছিলেন। এ সময় কাছাকাছি কোথাও বিকট শব্দে বজ্রপাত হয়। এ সময় বিশাখা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক সোহেল জানান, তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। বজ্রপাতের শব্দের কারণে তিনি হার্ট অ্যাটাক করে ঘটনাস্থলে মারা যান।
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মাখন রবি দাস (৪৮) নামে এক চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত মাখন ওই ইউনিয়নের অহিদাবাদ চা বাগানের মৃত শংকুরা রবি দাসের ছেলে।
জানা গেছে, সোমবার মাখন রবি দাস শ্রীধরপুর গ্রামের আলমাছ মিয়ার জমির ধান চুক্তিতে কেটে দিচ্ছিলেন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলে মাখন মারা যান।
উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বজ্রপাতে চা শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। পুলিশও এসেছে। মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফনের জন্য নিহতের স্বজনরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করবেন।
শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে সেফালী বেগম (৩৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের বেপারীকান্দি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত সেফালী বেগম ওই এলাকার সোহরাব হোসেন বেপারীর স্ত্রী। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরের দিকে আকাশ মেঘলা হয়ে আসে। গৃহপালিত গরুর জন্য ঘাস সংগ্রহ করতে সেফালী বেগম মাঠে যান। ঘাস কাটার সময় আকস্মিকভাবে শুরু হয় বজ্রসহ বৃষ্টি। হঠাৎ বজ্রপাত হলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা দ্রুত ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তবে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক বলেন, বজ্রপাতে এক নারীর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। মরদেহ হাসপাতালেই রয়েছে। এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুরে জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মানিক মিয়া (৬৫) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। তার সঙ্গে থাকা হানিফ মিয়া (৬০) গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত হানিফ মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চর-মরিচাকান্দি বিলপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মানিক মিয়া চর-মরিচাকান্দি বিলপাড়ার বাসিন্দা মৃত কালাগাজীর ছেলে ও আহত হানিফ মিয়া আহসান উল্লার ছেলে। তারা দুজনই একই পাড়ার বাসিন্দা।
জানা গেছে, উপজেলা সোনারামপুর ইউনিয়নের চর মরিচাকান্দি গ্রামের বিলপাড়ে দুপুরে সাড়ে বারোটার দিকে জমিতে কৃষিকাজ করে বাড়ি ফেরার সময় আকস্মিক বজ্রপাত হলে তারা গুরুতরভাবে আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে দ্রুত বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মানিক মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোর্শেদুল আলম চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমি জেনে পুলিশ পাঠিয়েছি এবং আইনি প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এমআই/